Inhouse product
পাবনার বিখ্যাত দেশী গরুর দুধের ঘি-Pabna's famous desi cow's milk ghee
বাঙালির রসনায় ঘি একটি অন্যতম প্রধান উপাদান। পোলাও-কোর্মা-বিরিয়ানি ছাড়া যেকোনো মুখরোচক খাবার তৈরিতে ঘি এর ব্যবহার সর্বত্র। এ ছাড়া গরম ভাতের সঙ্গে ঘি-লঙ্কা খাওয়ার চল আজও রয়েছে। আমরা অনেকেই এখন দোকান থেকে ঘি কিনে আনি, কেউ কেউ বাড়িতেও ঘি তৈরি করেন।
পদ্মার ইলিশ আর পাবনার ঘি/ জামাইয়ের পাতে দিলে আর লাগে কি?’ ঘি নিয়ে এ প্রবাদ শুধু পাবনাই নয়, দেশের অনেক এলাকাতেই প্রচলিত। দেশের বিভিন্ন এলাকা তো বটেই, বিদেশেও পাবনার ঘিয়ের কদর রয়েছে। এ জন্য ঘি নিয়ে পাবনাবাসীর গর্বের শেষ নেই।
ঘি নিয়ে পাবনাবাসীর গর্ব করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর, আটঘরিয়া ও পার্শ্ববর্তী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় উৎপাদিত গরুর দুধের কারণে। এ উপজেলাগুলো এখন দেশের সেরা দুগ্ধ উৎপাদনকারী এলাকা। শুধু তা-ই নয়, এ এলাকার দুধ স্বাদে ও মানেও দেশসেরা বলে এলাকাবাসী মনে করেন। মিল্ক ভিটা, প্রাণ দুধ, আড়ং দুধ, আকিজ ডেইরি অ্যান্ড ফুডসহ দেশের প্রধান দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানগুলো এ এলাকা থেকে দুধ সংগ্রহ করে দেশে দুধের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করে থাকে। ঘি উৎপাদনে পাবনার প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠার পেছনে দুধের এমন সহজলভ্যতাই মূল কারণ বলে এলাকার ঘি উৎপাদনকারীরা মনে করেন।
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঘি তৈরির মূল উপাদান হলো ননি। খাঁটি ননি সঠিক নিয়মে জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় উৎকৃষ্ট ঘি।
বেড়া পৌর এলাকার পরিমল ঘোষের ছানা তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে দুধ থেকে ননি বের করা হচ্ছে। পাবনায় ঘি তৈরিতে এগিয়ে রয়েছে বেড়া, সাঁথিয়া ও ফরিদপুর উপজেলা। এর মধ্যে বেড়ার ডাকবাংলা, পেঁচাকোলা, হাটুরিয়া; সাঁথিয়ার সোনাতলা, সেলন্দা, ডেমড়া; ফরিদপুরের গোপালনগর এলাকাগুলো ঘি তৈরির জন্য বেশ বিখ্যাত।
খাটি ঘি এর রং:
খাটি ঘি সাধারণত হালকা সোনালি হলুদ রঙের হয়। তবে ঘি যদি অতিরিক্ত হলুদ বা উজ্জ্বল হলুদ রঙের দেখায়, তাহলে তাতে ভেজাল থাকতে পারে।
ঘি খাওয়ার উপকারিতা :
খাটি ঘি য়ে রয়েছে যেমন সুগন্ধ তেমনি রয়েছে পুষ্টিগুণ। ঘি খাওয়ায় অনেক উপকার রয়েছে। যেমন-
★ ঘি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
★ পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে
★ মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
★ ওজন হ্রাস পায়
★ জয়েন্টগুলোতে পুষ্টি যোগায়
★ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
★এনার্জির ঘাটতি দূর করে
★সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়
ঘি খাওয়ার অপকারিতা:
ঘি খেলে৷ যেমন উপকার রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত বা ভেজাল ঘি খেলে অনেক অপকারও রয়েছে। যেমন :
★ মাত্রা অতিরিক্ত ঘি খেলে পরিপাকতন্ত্র কাজ করা কমিয়ে দেয়। এতে হজম সমস্যা আরও প্রকোট হয়।
★ ঘি তে যে পরিমাণ চর্বি থাকে তা স্বাভাবিক কিন্তু অতিরিক্ত গ্রহণে তা মাত্রাতিরিক্ত ফ্যাট জনিত সমস্যার সৃষ্টি করে।
★ অতিরিক্ত খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেটে পারে।
★ বেশি ঘি খেলে বদ হজম সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
★ দুগ্ধজাত খাবার হওয়ায় ঘি খেলে আসিডিটি ও পেট ফাঁপা বা ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ঘি খাওয়ার নিয়ম:
এক গ্লাস গরম দুধের সাথে এক চামচ ঘি মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। যে কোন তরকারি রান্না করার সময় ঘি দিলে সেই খাবারের স্বাদ অনেকগুণ বেড়ে যায়। এই কারণে বিয়ে বাড়ি বা কোন অনুষ্ঠান বাড়িতে ঘি ব্যবহার করা হয়। সেই সাথে সকালের বা বিকেলের নাস্তার সময় রুটি বা চাপাতির সাথে ঘি মিশিয়ে বাড়তি স্বাদ যোগ করা যায়।
ঘি সংরক্ষণের উপায়-
★ ঘি সংরক্ষণের জন্য প্রথমেই কাঁচের পাত্র বেছি নিন। প্লাস্টিকের পাত্রে কখনোই দীর্ঘদিন ঘি ভালো থাকে না। তাই প্লাস্টিকের পাত্রে ঘি কিনে আনলেও তা পরিষ্কার এবং শুকনো কাঁচের পাত্রে ঢেলে রাখুন।
★ দীর্ঘদিনের জন্য ঘি সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে ঘিয়ের পাত্রগুলো রোদে দিন।
রোদে দিলে জমাট বাঁধা ঘি গলে তরল হয়ে যাবে, ব্যবহারের সুবিধা হবে। এবং ভালো থাকবে।
★ ঘি চাইলে ফ্রিজে রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে ব্যবহারের বেশ খানেক সময় আগে বের করে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তারপর রান্নায় ব্যবহার করুন।
★ মনে রাখবেন, পানি আর তেল যেমন মেশে না তেমনি ঘি আর জলও মিশে না। তাই সতর্ক থাকুন ঘিয়ে যাতে কোনভাবেই পানি না পরে। এছাড়া ঘি পাত্র থেকে নেয়ার জন্য আলাদা শুকনো চামচ ব্যবহার করুন
★ ঘি রাখা পাত্রের ঢাকনা বারবার অকারণে খুলবেন না। তাতে ঘিয়ের ঘ্রাণ কমে যায়।
পোলাও ও বিরিয়ানি তৈরি করতে ঘি ব্যবহার করা বেশ প্রচলিত। সাধারণত উক্ত খাবারের স্বাদ ও ঘ্রাণ বৃদ্ধি করার জন্য রান্নার সময় খাটি ঘি ব্যবহার করা হয়।
যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে নিয়োমিত বিশুদ্ধ খাবার খান।
বিশুদ্ধতা মানেই সুস্থতা
আর সুস্থতা মানেই রসোবালি।